রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সারদা পীঠ মন্দির, মুসলিমরা বুক দিয়ে আগলাচ্ছে হিন্দু মন্দিরকে বাংলাদেশের কমলগঞ্জে মনিপুরীদের বৃহৎ রাসপূর্ণিমা উদযাপিত সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির নির্বাচনে জয়ী হলেন এড: চন্দন দাশ – এড: সমীর দাশগুপ্ত জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সনাতন টিভি’র ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত কিশোরগঞ্জ কেন্দ্রীয় কালীবাড়ীর জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় গরমজল গরুর মাংসের ঝোল নিক্ষেপ নানা অলৌকিক কাহিনী নিয়ে নরসিংদীর চিনিশপুরের কালী মন্দির, জানলে শিহরিত হবার মত বাংলাদেশ মাইনোরিটি ওয়াচ এর সভাপতি এডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষকে হত্যার হুমকি দেশের উন্নয়নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কাজে লাগাতে হবে : নওফেল কলকাতার জীবন্ত কালী মা শ্যামসুন্দরী, স্বয়ং প্রকটিত হয়ে মা নিজেই চাল কলা খেয়েছিলেন ছয় বছর ধরে নিজেদের তৈরি প্রতিমায় পূজা করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন রাউজানের তিন শিক্ষার্থী

এক সোনালি যুগের অবসান, প্রয়াত লতা মঙ্গেশকর

Spread the love

মুম্বই: প্রয়াত লতা মঙ্গেশকর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। প্রায় চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভরতি ছিলেন তিনি। কিন্তু শনিবার আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। দিতে হয় ভেন্টিলেশনে। সেখান থেকে আর ফেরানো যায়নি লতাকে। রবিবার সকালে তিনি প্রয়াত হন।

কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছিল। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন কিংবদন্তি। প্রথম থেকেই তাঁকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি শিল্পীর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু বয়সজনিত আরও নানা সমস্যা ছিল তাঁর। তার সঙ্গে আর জুঝে উঠতে পারেননি তিনি।

এর আগেও সঙ্কটজনক অবস্থায় একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল লতাকে। কিন্তু অনুরাগীদের আশ্বস্ত করে প্রত্যেকবারই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার আর সেটা হল না।
সংক্ষিপ্ত জীবনী

লতা ছিলেন ভারতীয় আধুনিক সংগীতজগতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী, বলিউডের সংগীতসম্রাজ্ঞী। যে সব হিন্দি ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেছেন তার তালিকা তৈরি করা এক দুরূহ বিষয়। হিন্দি ছবি ছাড়াও মারাঠি ও বাংলাতেও অসংখ্য গান গেয়েছেন। এ ছাড়াও ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক ভাষাতেও গান গেয়েছেন লতা। বেশ কিছু ছবিতে সংগীত পরিচালনাও করেছেন। তিনি ‘ভারতের নাইটিংগল’ নামে পরিচিত ছিলেন।

‘ভারতরত্ন’, ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘পদ্মভূষণ’ এবং দাদাসাহেব ফালকে সম্মানে সম্মানিত লতা মঙ্গেশকরের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এক মারাঠি পরিবারে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সব চেয়ে বড়ো। প্রত্যেকেই সংগীতের জগতে এক একটি রত্ন।

সংগীতের প্রাথমিক পাঠ উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের কাছে। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বাবাকে হারান লতা। তার আগে অবশ্য বাবার হাত ধরেই অভিনয় এবং গান শিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। ১৩-১৪ বছর বয়সেই প্রথম বার সিনেমায় গান গাওয়া। মরাঠি ছবিতে। এবং তার সঙ্গে অভিনয় করাও শুরু হয়। এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেন নবযুগ চিত্রপট মুভি কোম্পানির মালিক মাস্টার বিনায়ক।

মাস্টার বিনায়কের কোম্পানির সদর দফতর মুম্বইয়ে স্থানান্তরিত হলে ১৯৪৫-এ লতাও মুম্বই চলে আসেন। উস্তাদ আমন আলি খানের কাছে হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নেওয়া শুরু করেন। সেই সঙ্গে চলে হিন্দি ছবিতে গান গাওয়া ও অভিনয় করা। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন তাঁর বোন আশাও। ১৯৪৮ সালে হিন্দি ছবি ‘মজবুর’-এ গান গেয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন লতা। গানটি ছিল – ‘দিল মেরা তোড়া/ মুঝে কহিঁ ক ন ছোড়া’। কিন্তু পরের বছর মধুবালা অভিনীত ‘মহল’ ছবিতে ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গেয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান। তার পর আর লতাকে পিছন দিকে তাকাতে হয়নি।

এর পর নৌশাদের সংগীত পরিচালনায় লতা রাগ-ভিত্তিক গান গাইলেন ‘বৈজু বাওরা’, ‘মাদার ইন্ডিয়া’, ‘মুঘল-ই-আজম’ প্রভৃতি ছবিতে। শংকর-জয়কিষানের সংগীত পরিচালনায় লতা মেলোডি গান গাইলেন ‘বরসাত’ ও ‘শ্রী ৪২০’-এ। সলিল চৌধুরীর সংগীত পরিচালনায় ‘মধুমতী’ ছবিতে গান গেয়ে ‘শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লেব্যাক সিঙ্গার’ হিসাবে ‘ফিল্মফেয়ার পুরস্কার’ পেয়েছেন। এর পর আরও তিনটি ছবিতে ‘ফিল্মফেয়ার পুরস্কার’ পান লতাজি। সেগুলো হল ‘বিশ সাল বাদ’, ‘খানদান’ এবং ‘জীনে কা রাহ’।

‘পরিচয়’, ‘কোরা কাগজ’ এবং ‘লেকিন’ ছবিতে গান গাওয়ার জন্য ‘শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লেব্যাক সিঙ্গার’ হিসাবে লতা মঙ্গেশকর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিন বার। এ ছাড়াও আরও যে সব হিন্দি ছবিতে গান গেয়ে খ্যাতিলাভ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে ‘পাকিজা’, ‘অভিমান’, ‘অমর প্রেম’, ‘আঁধি’, ‘সিলসিলা’, ‘চাঁদনি’, ‘সগর’, ‘রুদালি’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ইত্যাদি।
লতার সঙ্গে এ আর রহমান। ছবি twitter থেকে নেওয়া।

লতাজির যে সব গান কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো’ শীর্ষক দেশাত্মবোধক গানটি। ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধে যে সব ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারান তাঁদের স্মরণে লতা এই গানটি পরিবেশন করেন ১৯৬৩-এর সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ও প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উপস্থিতিতে এই গান পরিবেশন করেন লতা।

বেশ কিছু মারাঠি ফিল্মে সংগীত পরিচালনা করেছেন লতাজি। ‘সাধি মানসে’ ছবিতে সংগীত পরিচালনা করার জন্য ১৯৬৫-তে মহারাষ্ট্র সরকারের শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের পুরস্কার পান লতা।
বাংলা সংগীতজগতে লতার অবদান

বাংলা সংগীতজগতে লতাজির প্রবেশ ১৯৫৬ সালে ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’ গানটির মধ্য দিয়ে। গানের সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সে বছরই ভুপেন হাজারিকার সুরে গাইলেন ‘রঙ্গিলা বাঁশী রে’। ব্যাপক হিট হল সেই গান। পঞ্চাশের দশকেই সলিল চৌধুরীর সুরে গাইলেন ‘যারে উড়ে যারে পাখি’, ‘না যেয়ো না’, ‘ওগো আর কিছু তো নয়’। পরে এই গানগুলির হিন্দি ভার্সনও হয় – ‘যা রে উড় যা রে পঞ্ছি’, ‘ও সজনা’ ও ‘তসবীর তেরে দিল মে’। ১৯৬০-এ সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে লতা রেকর্ড করলেন ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’। ১৯৬১০-তে সলিল চৌধুরীর সুরে গাওয়া ‘সাত ভাই চম্পা’ সুপারহিট হয়েছিল।

রেকর্ডের গানের পাশাপাশি টলিউডের সিনেমায় নিয়মিত গান গেয়েছেন লতা। ‘সুভাষচন্দ্র’ ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ এক সময়ে লোকের মুখে মুখে ফিরত। লতার গাওয়া ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’ (‘শঙ্খবেলা’), ‘নিঝুম সন্ধ্যায়’ (‘মণিহার’), ‘চঞ্চল মন আনমনা হয়’ (‘অদ্বিতীয়া’), ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’ (‘মণিহার’) ‘বলছি তোমার কানে’ (আমার তুমি), ‘আজ মন চেয়েছে’ (‘শঙ্খবেলা’) ইত্যাদি গান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল।

বাংলা ভাষায় মোট ১৮৫টা গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের পুরস্কার পেয়েছেন ১৫ বার।



আমাদের ফেসবুক পেইজ