সংগ্রাম দত্ত:
মার্চ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব পালিত হয়েছে। বাংলাদেশে এই উৎসবটি ‘দোলযাত্রা’, ‘দোল পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত।
দোলযাত্রা ও গৌর পূর্ণিমা উপলক্ষে সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
সারা দেশে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত এ উৎসব চলে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পরস্পরকে আবির মাখিয়ে এ উৎসব উদযাপন করে।
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দোল উৎসব ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে পূজা ও কীর্তন শুরু হয়।
বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রঙ খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন।
বিশ্বের অনেক স্থানে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারত ও নেপালে ‘হোলি’ নামে পরিচিত। কোনও কোনও স্থানে এটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’।
রাজধানী ঢাকায় বিশেষ করে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে হোলি খেলার প্রচলন রয়েছে। ‘হোলি’ বা ‘দোলযাত্রা’ উৎসব উপলক্ষে এদিন নগরবাসী একে অন্যকে বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে মাতোয়ারা হন। আবির খেলার উচ্ছ্বাসে মাতেন তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবাই। হোলির রঙে রঙিন হয়ে এই আনন্দে শামিল হন সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ। তবে এবার রোজার কারণে কিছুটা ভাটা পড়ে । এদিকে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে অন্যরকম আমেজ বিরাজ করে।
দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের তিথি নির্ধারিত হয়েছে পূর্ণিমার সময়ে। এই পূর্ণিমা ‘দোল পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত। দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় ‘হোলিকা’ নামক অপদেবীর দহনের মাধ্যমে বিদায়ী বছরের যা কিছু খারাপ সেসব বিসর্জন করা হয়। এদিন পূজা হয় এবং হালকাভাবে আবির খেলা হয়ে থাকে।
হোলি উৎসবে বন্ধুবান্ধব সবাই একে অপরকে রঙ মাখিয়ে রঙের খেলা উপভোগ করে। ।
বসন্তের রঙ যখন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে আপন মাধুরীতে, তখন হৃদয়ে দোলা লাগে। এই দিনে অন্তর থেকে দুষ্ট আত্মাকে বিতাড়িত করে শত্রুকে বিজয় করে। এদিন শক্তিতে নয়, রঙের সাজে শত্রুকে জয় করে।