সংগ্রাম দত্ত:
—————–
স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে কৌশলে সনাতন ধর্মাবলম্বী গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সোলায়মান আলী সবুজ নামে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ওই গৃহবধূর ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় এলাকাবাসীর হাতে আটক হয় ছাত্রলীগ নেতা সবুজ। খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বারোহাত কালী নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দৈনিক কালবেলা, প্রথম আলো সহ জাতীয় দৈনিক গুলোতে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ওই এলাকার মৃত নবদাসের ছেলে জলধর বিশ্বাসের স্ত্রী। অভিযুক্ত সোলায়মান আলী সবুজ একই ইউনিয়নের কুলাঘাট এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে জোরপূর্বক মীমাংসার চাপ সৃষ্টি করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও গ্রামের মাতব্বরেরা। মীমাংসায় রাজি না হলে ভুক্তভোগী পরিবারকে গৃহবন্দি করে রাখে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বাড়ির সামনে রীতিমতো পাহারা বসিয়ে দেয় তারা।
এমনকি ভুক্তভোগী পরিবার ঘর থেকে বের হতে পারেনি এবং কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারেনি। পরে তিন দিন ধরে মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ১০০ টাকা মূল্যের ৩টি নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে নিজ বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
পরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী জলধর কুড়িগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসে। সেখান থেকে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর ) সন্ধ্যায় লালমনিরহাট সদর থানায় এসে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
ওই গৃহবধূ জানান, দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রলীগ নেতা সবুজ তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় সে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তার স্বামী স্থানীয় কুলাঘাট বাজারে মাছের ব্যবসা করে সংসার চালায়। স্বামী জলধর বিশ্বাস রাতে বাজার থেকে ফেরার পথে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ছাত্রলীগ নেতা সবুজ। কিন্তু এতেও কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে সুযোগের সন্ধানে থাকে ওই ছাত্রলীগ নেতা। পরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দরজায় কড়া নাড়ে।
গৃহবধূ আরও জানান, ঘটনার দিন আমি বাড়িতে একা ছিলাম। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে তা খোলামাত্রই সে আমাকে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে আমি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। এ সময় সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীরা আটক করে।
পরে খবর পেয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে সবুজকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
গৃহবধূর স্বামী জলধর বিশ্বাস জানান, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে কথা বলে কুপ্রস্তাব দিত। এতে রাজি না হওয়ায় বাড়িতে একা পেয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে। পরে আমাকে টাকা নিয়ে মীমাংসা করার চাপ দেয় ছাত্রলীগ নেতা সবুজের লোকজন। এতে রাজি না হলে তারা আমাদের তিন দিন বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। পরে গত সোমবার বিকেলে ৩টি ১০০ টাকার ফাঁকা স্টাম্পে আমাদের সই নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে কুড়িগ্রামে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে আশ্রয় নেই। সেখান থেকে লালমনিরহাট সদর থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সামনে দুর্গাপূজা। ওরা আমাদের পূজার আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। আমি ছাত্রলীগের লম্পট নেতা সবুজের বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সোলায়মান আলী সবুজ বলেন, ‘আমাকে সমস্যার কথা বলে তার বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে ওই গৃহবধূ এলাকার লোকজনকে ডেকে এনে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়। আমার সঙ্গে ওই গৃহবধূর কোনো সম্পর্ক নেই।’
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি ওমর ফারুক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, ‘গত মঙ্গলবার ( ১৭ অক্টোবর ) রাতে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার দ্রুত তদন্ত শেষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’