উজ্জ্বল রায় (নিজস্ব প্রতিবেদক) নড়াইল ১৯৩৯ সালের ৩০শে নভেম্বর ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বহরমপুরে আসেন।,
এই সময় নেতাজী সুভাষ চন্দ্রকে মহাবিপ্লবী তারাক্ষ্যাপাজী একটি পত্র দেন। পত্র বাহক ছিলেন শ্রী যোগেন্দ্রপদ ভট্টাচার্য্য। গালা দিয়ে বন্ধ করা খামটি যোগেন্দ্রপদবাবু তারাক্ষ্যাপাজীর গুণমুগ্ধ ও বিপ্লবী শ্রী শশাঙ্কশেখর সান্যালের হাতে দেন নেতাজীকে দেবার জন্য।
শশাঙ্কবাবু নেতাজীর হাতে খামটি দিয়ে বললেন, “শ্রীমৎ তারাক্ষ্যাপা” আপনাকে এই পত্র দিয়েছেন। চিঠিখানি হাতে নিয়ে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সহসা যেন আত্মস্থ হয়ে যান কিছুক্ষণের জন্য। বিগত আটত্রিশ বছর ধরে (১৯০২-১৯৩৯ সাল) মহাবিপ্লবী তারাক্ষ্যাপাজীর আসমুদ্র হিমাচল জুড়ে দেশের মুক্তির জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের বিশাল কর্মধারার কথা সকল দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবীগণ জানতেন। নেতাজী শুধু জানতেনই না তার সাথে একাত্ম ছিলেন। উভয়ে একই পথের পথিক। তাছাড়া প্রায় ছয় বছর পূর্বে ভিয়েনায় দেশপ্রেমিক বিঠল ভাই প্যাটেলের রোগশয্যার পাশে নেতাজী সুভাষচন্দ্র যখন তাঁর শুশ্রূষা করছিলেন এবং চিন্তিত এবং কিছুটা বিপন্ন বোধ করছিলেন, সেই নিঃসঙ্গতার মুহূর্তে অলৌকিকভাবে মহাযোগী ও মহাবিপ্লবী তারাক্ষ্যাপাজী তাঁর পাশে উপস্থিত হ’ন।
যাহোক চিঠিখানা হাতে নেবার একটু পরেই নেতাজীর আত্মস্থ-ভাব কেটে যায়। তিনি চমকে উঠে বললেন, “তারাক্ষ্যাপা বেঁচে আছেন? কোথায় থাকেন, আমি দেখা করবো”। শশাঙ্কবাবু বললেন “উনি শহরের প্রান্তেই নিজ আশ্রমে থাকেন এবং বৈকালে লালবাগে যাওয়ার পূর্বেই যাতে দেখা হয় তার চেষ্টা করবো।”
নেতাজী সুভাষচন্দ্র তারাক্ষ্যাপাজীর চিঠিটি খুললেন। লাল পেন্সিলে লেখা চিঠিটি। বিরানব্বুই বছর বয়স্ক মহাবিপ্লবী তারাক্ষ্যাপাজী লিখেছেন-
সুভাষ বসু।
৫/৬ বৎসর পূর্বে একদিন ভিয়েনার কথা মনে কর। পদ চুম্বন ধর্ম নয়। ইন্দ্রকে “গোত্রভিৎ” বলে। আর বলদেবকে “ ষমুনাভৎ” বলে। তুমি কিছু ভেদ করেছ? অষ্টবজ্র মিলন কাল এসে গেছে। কোথায় কার উদ্দেশ্যে যাইতেছ?
তোমাদের …
পত্রটি পড়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্র, শশাঙ্ক সান্ন্যাল মহাশয়ের হাতে পত্রটি দিয়ে বললেন, “দেখুনতো শশাঙ্কবাবু, এ সব বুঝেন, উদ্ধার করতে পারেন”?
শশাঙ্কবাবু পত্রটি পড়লেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র সেদিনই তারাক্ষ্যাপাজীর সাথে সাক্ষাতের জন্য বিশেষ ভাবে অধীর হলেন। এই সাক্ষাতের ব্যাপারে শশাঙ্কবাবু, উমাবনম্ আশ্রমে যান এবং ফিরে এসে মধ্যাহ্ন ভোজের সময় (নেতাজী শশাঙ্কবাবুর পিতৃগৃহেই মধ্যাহ্ন ভোজন করেন সেদিন) নেতাজীকে জানান যে তারাক্ষ্যাপাজী কলকাতায় তাঁর সাথে (শশাঙ্ক বাবুর) যোগাযোগ করে তাঁকে নিয়ে নেতাজীর সাথে সাক্ষাত ও আলোচনা করবেন।
জয় তারা জয় বাম। জয় জয় তারা জয় জয় বাম। জয় তারাক্ষ্যাপা।