নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মত চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলাতেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভূ-সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে প্রতারক চক্র। এবার আদালতের নির্দেশে এমন একটি চক্রের জালিয়াতির প্রমাণ তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেই প্রতিবেদন পেয়ে জালিয়াত চক্রের ৬ সদস্যর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
নকল টিপসই, নকল স্বাক্ষরসহ বানোয়াট কাগজপত্র দিয়ে অন্যের জমি হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে জাল দলিল তৈরির দায়ে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার একজন দলিল লেখকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক প্রতিবেদনসহ সংস্থাটির দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের পর শুনানি শেষে পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জালিয়াতচক্রের এই ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ২৪ ফেব্রুয়ারী (সোমবার)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রতারণা ও জালিয়াতের দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় দলিল লেখক উত্তর গোবিন্দরখীল এলাকার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, পশ্চিম গোবিন্দরখীলের মোহাম্মদ নুরুল আলম, মোহাম্মদ সেলিম, মোঃ নুরুল আমিন, ভাটিখাইন এলাকার আলীম উদ্দীন, ধউর ডেঙ্গার নিখিল বিশ্বাস।
পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী মোঃ ফোরকান বলেন, পটিয়া উপজেলায় ভূমির ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি ও নানান উপযোগিতা বাড়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রতারকচক্র জাল দলিল তৈরি করে নিরীহ মানুষজনের ভূ-সম্পত্তি হাতিয়ে আসছেন। এমন একটা জাল দলিল শনাক্ত হলে ২০২৩ সালের ৫ জুন উত্তরাধিকার সূত্রে ভূমির মালিক চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সদস্য আয়কর আইনজীবী অজয় মিত্র বাদী হয়ে নিজেদের অংশের জন্য উক্ত দলিলের গ্রহীতা মোহাম্মদ নুরুল আলম ও মোহাম্মদ সেলিম সহ সনাক্তকারী, স্বাক্ষী ও দলিল লেখকের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশী মামলা করেন।
আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি-চট্টগ্রামকে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তদন্ত কার্যক্রম শেষে এবং ফরেনসিক প্রতিবেদনসহ জাল দলিল সৃজনের ঘটনায় ছয়জনের সম্পৃক্ততা রয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ আব্দুল করিম। ২৪ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) সেই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ২৫ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) বিকাল ৩টায় এএসআই মোঃ জুয়েল আসামী (দলিল লেখক) মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে পটিয়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের পাশে তার নিজের অফিস থেকে গ্রেফতার করে বলে নিশ্চিত করেন পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আতাউর রহমান।
সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট লিটন রঞ্জন দাশ বলেন, সনাতনীদের জমি রক্ষায় প্রতারক ও জালিয়াত চক্রের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কোন ধরণের জাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রচলিত আইনে ভূমি সংক্রান্ত জালিয়াতি দন্ডনীয় অপরাধ। জালিয়াতদের শাস্তি হলে এ ধরণের চক্রের অন্যরা অপরাধ করতে সাহস পাবে না। সনাতনীদের উচিত নিজেদের আইনগত অধিকার রক্ষায় সচেতন থেকে আইনের দ্বারস্থ হওয়া।