নিজস্ব প্রতিবেদক সনাতন টিভি : আজ সোমবার (৪ আগস্ট) কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ও আবৃত্তিকার বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের জন্মদিন। ১৯০৫ সালের ৪ আগস্ট কলকাতার আহিরিটোলা অঞ্চলের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন তিনি। আজ তাঁর জন্মের ১২০ বছর পূর্তি। বিশেষ এই দিনে তাঁকে স্মরণ করছে সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নানা পোস্ট, ভিডিও ও স্মৃতিচারণ।
কণ্ঠের যাদুতে চিরস্মরণীয় মহিষাসুরমর্দিনী
বাংলা রেডিও ইতিহাসে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের নাম শোনা মানেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটির আবেগময় স্মৃতি। ১৯৩১ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে প্রথমবার প্রচারিত হয় দেবী দুর্গার বন্দনা ও কাহিনি ভিত্তিক এই অনুষ্ঠান। মহালয়ার ভোরের আবহ সৃষ্টি করে তাঁর কণ্ঠে পাঠ করা মন্ত্র, শ্লোক ও বর্ণনা।
পরবর্তী সময়ে, ১৯৭৬ সালে এই অনুষ্ঠানের বর্ণনাকারী পরিবর্তনের চেষ্টা করা হলেও ব্যাপক সমালোচনা ও শ্রোতাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে আবারও ফিরিয়ে আনা হয় তাঁর মূল রেকর্ডিং। এরপর থেকে প্রতি বছর মহালয়ার সকালে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সেই রেকর্ডিং-ই প্রচারিত হচ্ছে, যা আজও বাঙালির আধ্যাত্মিক আবেগের অংশ।
নাটক ও মঞ্চের মানুষ
বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র শুধু আবৃত্তিকারই নন, ছিলেন দক্ষ মঞ্চ অভিনেতা ও পরিচালকও। নাট্যকার হিসেবে তাঁর রচিত ও নির্দেশিত একাধিক নাটক সে সময়ের নাট্যাঙ্গনে সাড়া জাগিয়েছিল। বাংলা সংস্কৃতির এই বহুমুখী সাধকের কণ্ঠ ও সৃষ্টিশীলতা এখনো সমানভাবে প্রশংসিত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি
আজকের দিনে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভেসে এসেছে তাঁকে নিয়ে নানা স্মৃতি ও শ্রদ্ধা। একজন বাঙালি লিখেছেন,
> “মহালয়া মানেই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ। এই কণ্ঠ ছাড়া মহালয়া কল্পনাই করা যায় না।”
আরেকজন লিখেছেন,
> “একটি কণ্ঠ যুগ পেরিয়ে মানুষকে নাড়া দেয়—এর নাম বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র।”
শেষ জীবন ও উত্তরাধিকার
দীর্ঘ কর্মজীবনে রেডিওর পাশাপাশি নাট্যচর্চা, আবৃত্তি এবং সৃজনশীল শিল্পচর্চায় রেখেছেন অমলিন ছাপ। ১৯৯১ সালের ৩ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তবু তাঁর কণ্ঠ আজও মহালয়ার প্রতীক হয়ে আছে।
২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘Mahalaya’ চলচ্চিত্রে তাঁর জীবনী অবলম্বনে তৈরি চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেতা সুবাশিষ মুখার্জি, যা প্রশংসা কুড়ায়।
আজ জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনসহ বিশ্বব্যাপী বাঙালিরা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।