নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কেউটিয়া সৎসঙ্গ পল্লীর স্বর্গীয় অধীর চন্দ্র পালের বাড়ি প্রাঙ্গণে সার্বজনীন শ্রীশ্রী কার্তিক পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী মহাসমারোহে সম্পন্ন হয়েছে দেবসেনাপতি কার্তিক পূজা। গত ১৬ ও ১৭ নভেম্বর রবি ও সোমবার আয়োজিত এই পূজাকে ঘিরে পুরো এলাকা রূপ নেয় এক বর্ণিল ধর্মীয় উৎসবে।
পূজা উপলক্ষে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে করা হয় আলোকসজ্জা, সন্ধ্যার পর প্রদীপ ও রঙিন আলোর ঝলকানিতে পূজামণ্ডপ ছিল আলোকময়। প্রতিমা পূজা দর্শনে স্থানীয় ভক্তদের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকেও ভিড় করেন শতশত ভক্ত-অনুরাগী। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকলের উপস্থিতিতে পূজা মণ্ডপ পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত ধর্মীয় মিলনমেলায়।
দুই দিনের পূজা-অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ছিল প্রতিমা বরণ, অধিবাস এবং ভজন–কীর্তন। ঢাক-কাঁসর, শঙ্খ–ধ্বনি ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো এলাকা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন সকালে গীতাপাঠ দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যায় ঢাকের তালে ঐতিহ্যবাহী ধুনুচি নৃত্য, আরতি, ভোগ নিবেদন, ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ, যজ্ঞ ও পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে আগত ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
সন্ধ্যার পর শুরু হয় চার প্রহরব্যাপী শ্রীশ্রী কার্তিক পূজা, যা রাত গভীর পর্যন্ত চলে। পূজার পৌরহিত্য করেন শিক্ষক রুপন চক্রবর্তী, যিনি শাস্ত্রোচ্চার ও বিধিবদ্ধ নিয়মে সকল মাঙ্গলিক কার্য সম্পন্ন করেন।
পূজার উদ্যোক্তা অন্তর পাল আকাশ বলেন, “আমাদের সৎসঙ্গ পল্লীতে বহু বছর ধরে কার্তিক পূজা অনুষ্ঠিত হলেও এবার ভক্তদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে প্রতিমা পূজার আয়োজন করেছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মীয় ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এবং সামাজিক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করতেই আমরা এই আয়োজন করেছি। ভক্তদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই আমাদের আয়োজনকে সফল করেছে।”
পূজায় উপস্থিত ছিলেন অজিত শীল, মনি মজুমদার, নির্মল নাথ, বাবু আচার্য্য, রাজু আচার্য্য, ছোটন শীল, বাবু নাথ, বিধান মজুমদার, বিজয় নাথ, প্রীতম নাথ, স্বপ্না রানী পাল, অর্পিতা পাল, হ্যাপি চৌধুরী, অর্পি চৌধুরীসহ আরও অনেকে।
কার্তিক হলেন দেবসেনাপতি বা পৌরাণিক দেবতা। তিনি মহাদেব এবং পার্বতীর সন্তান। তিনি শক্তি, সাহস ও বিজয়ের প্রতীক। পুরাণে উল্লেখ রয়েছে, তারকাসুরকে বধ করার উদ্দেশ্যে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, ভক্তরা সন্তান লাভের আশীর্বাদ, কল্যাণ ও নানান মনোবাসনার সিদ্ধিলাভের আশায় কার্তিক পূজা করে থাকেন।
মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় জলাশয়ে প্রতিমা দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় দুই দিনব্যাপী এই ধর্মীয় আয়োজন। বিসর্জন শোভাযাত্রায় স্থানীয় শতাধিক ভক্ত অংশ নেন। ভক্তরা জানান, এমন সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পূজা আয়োজন আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকুক।